ঢাকা ০৮:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম...

লাগামহীন নেতানিয়াহু: আস্থাহীন বাইডেন প্রশাসন

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে দেওয়ার হোতা পশ্চিমাদের অন্ধ সমর্থনপুষ্ট ইহুদিবাদি দখলদার ইসরায়েল। জায়নবাদিদের আগ্রাসী মনোভাবের ফলে সৃষ্ট অশান্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে। অযৌক্তিক ও লাগামহীন কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন খোদ মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা এক্সিওস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা জানায়, ‘ইসরায়েলিদের প্রতি আমাদের আস্থা এখন খুবই কম এবং তা একটি সঙ্গত কারণে’;  খবর তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) প্রকাশিত এক্সিওসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের প্রতি হোয়াইট হাউসের অবিশ্বাস সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েছে। এর কারণ হিসাবে তেল আবিবের আরব অঞ্চল জুড়ে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াকে দায়ি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

চলতি মাসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ইসরাইলের প্রতি ইরানকে মারমুখী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মাঝে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি ইসরায়েলে স্মরণকালের ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলার প্রতিক্রিয়া জানতে ইসরায়েলের সঙ্গে নীতিগত মতানৈক্যে আমেরিকার আস্থাহীনতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এদিকে, তেহরান বলছে যে তারা জুলাই মাসে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা এবং গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেওয়া সাক্ষাৎকার ওই চার মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এক্সিওস নিউজ জানায়,  যে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার বিরোধিতা করছে না তবে তারা আক্রমণের ধরন ও পরিধি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পেতে চায়।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ইসরায়েলিদের প্রতি আমাদের আস্থা এখন খুবই কম এবং তা একটি সঙ্গত কারণে।”

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গত সপ্তাহে তার ইসরায়েলি প্রতিপক্ষ রন ডার্মারকে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছ থেকে ইরানে হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে “স্পষ্টতা এবং স্বচ্ছতা” আশা করে। কারণ ইসরায়েলের যেকোনো ধরনের হামলা এ অঞ্চলের মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্বার্থে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

যদি বাইডেন প্রশাসনকে আগে থেকে অবহিত না করা হয়, তবে ইরান থেকে পরবর্তীতে সম্ভাব্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে আমেরিকা কোনো পদক্ষেপ নেবে না, সুলিভান তার আলোচনায় এমন ইঙ্গিত করেছেন বলে জানিয়েছে এক্সিওস।

জবাবে ডার্মারও ইরানে হামলার বিষয়ে আমেরিকাকে আড়ালে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এবিষয়ে ওই চার মার্কিন কর্মকর্তারা একমত হতে পারেনি।

এক্সিওস আরো জানায়, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধকারে রেখেছিল ইসরায়েল, যা নেতানিয়াহুর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এক্সিওসের ওই প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ ও হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার বিষয়েও বাইডেন প্রশাসনকে আগে থেকে জানানো হয়নি। বরং গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্ধিবিনিময় চুক্তি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে প্রতিশ্রুতি প্রদানের এক দিনের মাথায় আক্রমন চালায় নেতানিয়াহু।

সম্প্রতি বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমান হামলা করে নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এক্সিওস বলছে, ওই হামলার সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনকে যথা সময়ে অবহিত করেনি নেতানিয়াহু। এতে অস্টিন চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনকে বলেছেন যে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনকে আগাম সতর্কতা না দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে দুই মিত্রদেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য বিভ্রাটের জেরে বাতিল হয়ে যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্যালান্টের পেন্টাগন সফর, যা বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পেন্টাগন জানায়, শেষ মুহূর্তে ওই সফর বাতিল করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে যে নেতানিয়াহু তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ওয়াশিংটনে যেতে নিষেধ করছেন যতক্ষণ না বাইডেন তাকে সরাসরি ফোন করেন।

লেবাননে মার্কিন-সমর্থিত ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব থেকে সরে যাওয়ার ফলে নেতানিয়াহুর প্রতি  মার্কিন বিশ্বাসে আরো ক্ষয় হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন হোয়াইট হাউসের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উত্তর গাজার সমস্ত বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণ গাজায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু। সুতরাং বুঝা যায় যে এই অঞ্চলে একটি নতুন আক্রমণ প্রস্তুত করছে ইসরায়েল৷

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদেরকে আর কখনোই হয়ত তাদের ভূখণ্ডে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না, এমনটাই আশংকা করছে মার্কিন প্রশাসন।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লাগামহীন নেতানিয়াহু: আস্থাহীন বাইডেন প্রশাসন

লাগামহীন নেতানিয়াহু: আস্থাহীন বাইডেন প্রশাসন

আপডেট সময় : ০৪:০৮:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে দেওয়ার হোতা পশ্চিমাদের অন্ধ সমর্থনপুষ্ট ইহুদিবাদি দখলদার ইসরায়েল। জায়নবাদিদের আগ্রাসী মনোভাবের ফলে সৃষ্ট অশান্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে। অযৌক্তিক ও লাগামহীন কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন খোদ মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা এক্সিওস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা জানায়, ‘ইসরায়েলিদের প্রতি আমাদের আস্থা এখন খুবই কম এবং তা একটি সঙ্গত কারণে’;  খবর তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) প্রকাশিত এক্সিওসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের প্রতি হোয়াইট হাউসের অবিশ্বাস সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েছে। এর কারণ হিসাবে তেল আবিবের আরব অঞ্চল জুড়ে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াকে দায়ি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

চলতি মাসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ইসরাইলের প্রতি ইরানকে মারমুখী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মাঝে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি ইসরায়েলে স্মরণকালের ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলার প্রতিক্রিয়া জানতে ইসরায়েলের সঙ্গে নীতিগত মতানৈক্যে আমেরিকার আস্থাহীনতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এদিকে, তেহরান বলছে যে তারা জুলাই মাসে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা এবং গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেওয়া সাক্ষাৎকার ওই চার মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এক্সিওস নিউজ জানায়,  যে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার বিরোধিতা করছে না তবে তারা আক্রমণের ধরন ও পরিধি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পেতে চায়।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ইসরায়েলিদের প্রতি আমাদের আস্থা এখন খুবই কম এবং তা একটি সঙ্গত কারণে।”

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গত সপ্তাহে তার ইসরায়েলি প্রতিপক্ষ রন ডার্মারকে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছ থেকে ইরানে হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে “স্পষ্টতা এবং স্বচ্ছতা” আশা করে। কারণ ইসরায়েলের যেকোনো ধরনের হামলা এ অঞ্চলের মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্বার্থে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

যদি বাইডেন প্রশাসনকে আগে থেকে অবহিত না করা হয়, তবে ইরান থেকে পরবর্তীতে সম্ভাব্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে আমেরিকা কোনো পদক্ষেপ নেবে না, সুলিভান তার আলোচনায় এমন ইঙ্গিত করেছেন বলে জানিয়েছে এক্সিওস।

জবাবে ডার্মারও ইরানে হামলার বিষয়ে আমেরিকাকে আড়ালে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এবিষয়ে ওই চার মার্কিন কর্মকর্তারা একমত হতে পারেনি।

এক্সিওস আরো জানায়, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধকারে রেখেছিল ইসরায়েল, যা নেতানিয়াহুর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এক্সিওসের ওই প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ ও হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার বিষয়েও বাইডেন প্রশাসনকে আগে থেকে জানানো হয়নি। বরং গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্ধিবিনিময় চুক্তি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে প্রতিশ্রুতি প্রদানের এক দিনের মাথায় আক্রমন চালায় নেতানিয়াহু।

সম্প্রতি বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমান হামলা করে নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এক্সিওস বলছে, ওই হামলার সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনকে যথা সময়ে অবহিত করেনি নেতানিয়াহু। এতে অস্টিন চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনকে বলেছেন যে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনকে আগাম সতর্কতা না দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে দুই মিত্রদেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য বিভ্রাটের জেরে বাতিল হয়ে যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্যালান্টের পেন্টাগন সফর, যা বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পেন্টাগন জানায়, শেষ মুহূর্তে ওই সফর বাতিল করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে যে নেতানিয়াহু তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ওয়াশিংটনে যেতে নিষেধ করছেন যতক্ষণ না বাইডেন তাকে সরাসরি ফোন করেন।

লেবাননে মার্কিন-সমর্থিত ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব থেকে সরে যাওয়ার ফলে নেতানিয়াহুর প্রতি  মার্কিন বিশ্বাসে আরো ক্ষয় হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন হোয়াইট হাউসের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উত্তর গাজার সমস্ত বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণ গাজায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু। সুতরাং বুঝা যায় যে এই অঞ্চলে একটি নতুন আক্রমণ প্রস্তুত করছে ইসরায়েল৷

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদেরকে আর কখনোই হয়ত তাদের ভূখণ্ডে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না, এমনটাই আশংকা করছে মার্কিন প্রশাসন।